পাকিস্তানে ইতিমধ্যে জোট সরকার গঠনে একমত হয়েছে পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। ক্ষমতা ভাগাভাগি নিয়ে কয়েক দিন ধরে দর-কষাকষির পর দুই দলের মধ্যে গত মঙ্গলবার রাতে সমঝোতা হয়।
অন্যদিকে গতকাল বুধবার পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিল দলে যোগ দিয়েছেন। তারাই এখন পার্লামেন্টের বিরোধী দল হতে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় সামনের দিনগুলোতে কী হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে আজ সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে ডন।
সম্পাদকীয়তে বলা হয়, পিপিপি ও পিএমএল-এনের মধ্যকার সমঝোতা অনুযায়ী, আবারও শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বে জোট সরকার পাচ্ছে পাকিস্তান। শাহবাজের নেতৃত্বাধীন আগের সরকার ভেঙে দেওয়ার সাত মাসের কম সময়ের মধ্যে নতুন সরকার দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে
পিপিপির কো–চেয়ারম্যান আসিফ আলী জারদারিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে মনোনীত করেছে পিএমএল-এন ও পিপিপি। জাতীয় পরিষদের স্পিকার নির্বাচিত করা হবে পিএমএল-এন দল থেকে। আর সিনেটের চেয়ারম্যান এবং খাইবার পাখতুনখাওয়া ও পাঞ্জাবের গভর্নর হিসেবে পিপিপির নেতাদের মনোনীত করা হবে।
বেলুচিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদেও দুই দল একসঙ্গে সরকার গঠন করবে। তবে সরকার গঠন নিয়ে জটিলতার নিরসন হলেও সরকার গঠনের পর পিপিপি যে পিএমএল-এনের সব কাজে সমর্থন জুগিয়ে যাবে, সেটার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
শুধু অনাস্থা ভোট হলে কিংবা ব্যয় বিল পাসের ক্ষেত্রে পিপিপি দলের সদস্যরা পিএমএল-এনের জন্য ভোট দেবে। অন্য ক্ষেত্রে পিএমএল-এন নিজেদের ইচ্ছেমতো কাজ করবে।
পিটিআই–সমর্থিত জয়ী স্বতন্ত্ররা ইতিমধ্যে সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলে যোগ দিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলই এখন একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার দিক থেকে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের সবচেয়ে বড় দল। সে সুবাদে বলা চলে, পিটিআই দলটি জাতীয় পরিষদের বিরোধী দল হতে যাচ্ছে। একই সঙ্গে বিরোধী দলের নেতাও তাঁদের মধ্য থেকে নির্বাচিত হবেন।
এমন অবস্থায় সরকার পরিচালনা করতে গিয়ে শাহবাজ শরিফকে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে। আগের সরকার পরিচালনার সময় তাঁকে সত্যিকার অর্থে কোনো ধরনের বিরোধিতার মধ্যে পড়তে হয়নি।
সম্পাদকীয়তে বলা হয়, এবারের পার্লামেন্ট যেনতেন পার্লামেন্ট হবে না। এবারের পার্লামেন্টে শাহবাজকে সাহসিকতার পরিচয় দিতে হবে। এমনকি তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকারের বৈধতা প্রশ্নে চ্যালেঞ্জের মধ্যেও পড়তে হতে পারে। তাঁরা ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ‘জনরায় চুরি’ করে সরকার গঠন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
শাহবাজ শরিফের সবচেয়ে বড় কাজ হবে, তাঁর আগের প্রশাসন যেসব অকাজ করে গেছে, সেগুলো সাফ করা; বিশেষ করে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে।
পাকিস্তানের জনসাধারণের একটা বিশাল অংশ নির্বাচনের ফল নিয়ে ক্ষুব্ধ। অবিরত মূল্যস্ফীতির কারণে নাগরিকেরা প্রায় দেউলিয়া হওয়ার পর্যায়ে চলে গেছেন। এমন অবস্থায় পাকিস্তানের অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার প্রয়োজন হলেও শাহবাজের জন্য কাজটি করা অতটা সহজ হবে না। তাঁকে নিশ্চিতভাবেই জনগণের প্রতিরোধের মুখে পড়তে হবে।
শাহবাজ শরিফ বলেছেন, তিনি পাকিস্তানকে ‘রক্ষা’ করতে চান। তবে কতক্ষণ পর্যন্ত তিনি তাঁর অবস্থান ধরে রাখতে পারেন, সেদিকেই এখন অনেকে তাকিয়ে আছেন।